মোঃ জাবেদুল ইসলাম।
বাবা নলডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, নাম ফজর আলী, বয়স একান্ন বাহান্ন বছরের কাছাকাছি হবে। আমার বাবার বন্ধু অই একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আলতাবুর রহমান, বয়স আমর বাবার বয়সের সমবয়সী হবে বলে অনুমান করা হয়। আলতাবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি আমাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম। আমি এ বছর মাষ্টার্স পাশ করছি। কিছু দিন যেতে না যেতেই এলজিইডি ডিপার্টমেন্টে সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকুরী পেয়ে যাই। বাবা মা আর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে খুশি যেন ধরে না। বেশ করে সবাই কে মিষ্টি খাওয়ালাম। সকলেই আমার কর্মজীবনকে সুখী হওয়ার কথা প্রাণ খুলে দোয়া করতে লাগলো। আমি চাকরিতে জয়েন্ট করলাম। ভালো যাচ্ছিলো আমার কর্মজীবন। হঠাৎ আমার সংসার জীবন গড়ে তোলার জন্য প্রত্যয় জাগলো মনে। বন্ধু বান্ধব সবাই আমাকে বিয়ে করার জন্য এটা ওটা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগলো। প্রতি নিয়ত বিয়ে করা নিয়ে কথা গুলো আর ভালো লাগছিলো না মোটেই। বাবা যে আগেই আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন তাঁর স্কুলের সহকারী শিক্ষক জনাব আলতাবুর রহমানের মেয়ে শামসুন্নাহার মিলির সঙ্গে, সেটা বাবা আমাদের বাড়ির কারোর কাছে প্রকাশ করেননি। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মারফতে আমার বিয়ে করার অভিমত ব্যক্ত করলাম। বন্ধু সাদিক কয়েকদিন পরে আমাদের বাড়িতে আসলো। অনেক অনেক কুশল বিনিময় হলো আমাদের সকলের মধ্যে। আমি এর মধ্যে আপ্যায়ণের ব্যবস্থা করার জন্য কাজের বুয়াকে তাগিদ দিলাম। বুয়া খুব বুদ্ধিমতি, কোন মেহমান আসলে তাঁকে ফরমায়েশ করা লাগে না। সে ভালো করে জানে। কোন মেহমানকে কি রকম মেহমানদারি করতে হয়। তা সে ভালো করে জানে। সাদিক এরই ফাঁকে আমার বাবা মায়ের কাছে আমার বিয়ের কথা খুলে বল্লো। অনিকের বিয়ের বয়স হয়েছে। ওকে বিয়ে দিতে হবে। বাবা বল্লো অনিকের বিয়ে আমি আমার বন্ধুর একমাত্র মেয়ে শামসুন্নাহার মিলির সঙ্গে ঠিক করে রেখেছি। অনিকের বিয়ে মিলির সঙ্গে হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ের বিষয়ে পাকাপত্তো করে আসবো। খুব ভালো মেয়ে মিলি। শিক্ষা দিক্ষায় বেশ ভালো। সংসা মনোযোগী মেয়ে। সবাই তাঁকে ভালো মেয়ে বলেই জানে। সাদিক আর দ্বিতীয় মত পোষণ করে না। চাচাজান তার ছেলের জন্য আগেই থেকে মেয়ে পছন্দ করে রেখেছেন এখানে আবার কারোআর দ্বিমত পোষণ করার কি আছে। সাদিক অনিককে জানিয়ে দিলো যে, মিলির সঙ্গে তোর বিয়ে পাকা করে রেখেছেন চাচাজান।আর অন্য কোথাও মেয়ে দেখার প্রয়োজন নাই। চাচাজান তাঁর বন্ধুকে কথা দিয়ে রেখেছে। আর এখানে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নাই। চাচাজান কে তুই ভালো করেই চিনিস। উনি যাকে কথা দেয় তার কথার বরখেলাপ হয়না। আলতাবুর রহমান সাহেবও শিক্ষক মানুষ। খুব ভালো পরিবার। মিলি মেয়েটিও খারাপ নয়। সহজ সরল আর পরিপশ্রমী। সংসার মনোযোগী। সারাক্ষণ সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মনে হয় যেন, সংসারের সব দায়িত্ব তার মাথার উপর বোঝা হয়ে আছে। সংসারের কোনো কাজই তাঁকে বলা লাগে না। তার আগেই সে কাজ করে ফেলেছে। এজন্য বাবা মা আদর সোহাগ ভরা কন্ঠে সবসময় বলে আমার এই পাগলিটা যে বাড়িতে বউ হয়ে যাবে। সে বাড়ি উজ্জ্বল হয়ে যাবে। অনিকের বাবা ফজর আলী সপ্তাহখানেক পরে মিলিদের বাড়ি গিয়ে হাজির হলো। মিলিকে ডাকলেন মিলির হবু শশুর ফজর আলী। মিলি বাড়ি হতে বের হয়েই দেখলেন তার হবু শশুর ফজর আলী দাঁড়িয়ে আছেন। চাচাজান আচ্ছালামুয়াইকুম। কেমন আছেন? কখন আসলেন? এই তো মা। এসে তোমাকে ডাকলাম। তোমার বাবা আছেন। জ্বি চাচাজান আব্বাজান ঘরের ভিতরে আছেন। আপনি চেয়ারে বসুন। আমি আব্বাজান কে বলছি এবং আপনার জন্য চা করে নিয়ে আসছি। ব’লে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে মিলির বাবা আলতাবুর রহমান সাহেব বাড়ির ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসলো। আচ্ছালামুয়ালাইকুম স্যার। কেমন আছেন স্যার। কখন আসলেন? আছি আলহামদুলিল্লাহ ভাই, এইতো এসেই মিলি মায়ের সঙ্গে দেখা হয়। ওই তোমাকে ডেকে আনলো। এরই ফাঁকে মিলির মা আয়েশা খাতুন এসে ছালাম বিনিময় করলো। মিলি তিনটা চেয়ার এনে তাদেরকে বসতে দিলো। তারা উভয় পরিবারের খোঁজ খবর নিলেন। মিলি এর মধ্যে ট্রে ভর্তি চা নাস্তা এনে তাদের সামনে এগিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিলির বাবা আলতাবুর রহমান এবং তার হবু শশুর ফজর আলী, আর মিলির মা আয়েশা খাতুন তিন জনে চা খাচ্ছে আর মিলি আর অনিকে বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করছে। মিলির বাবা আলতাবুর রহমান এবং তার মা আয়েশা খাতুন আপত্তি জানালো। আপত্তি হলো তাদের মেয়ের গায়ের রং কালো ফজর আলী সাহেবের ছেলের চেহারা স্মার্ট এবং হ্যানস্যাম, এমন ছেলে যদি আমার মেয়েকে বউ হিসেবে গ্রহণ না করে। তাহলে তাদের মধ্যে একটা বিরাট মনোমালিন্য হবে। বিয়ের আগেই ওদের মতামত জানা একান্ত জরুরি। নয়তো পরে হিতে বিপরীত হতে পারে। ফজর আলী মানবে না কিছুতে। আলতাবুর রহমানও তার প্রধান শিক্ষকের সাথে এতোদিনের সুসম্পর্ক, কি ভাবে স্যার কে না কথা বলি। মা আয়েশা খাতুনও একই সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। ফজর আলী স্যার সত্যি মাটির মানুষ। তার পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা আছে। বিশ্বাস আছে। তারা কখনো আমাদের মেয়েকে অবহেলা করবে না। ফজর আলী স্যার এবার কাকুতি মিনতি করে আলতাবুর রহমান এর হাত ধরে ফেলে বলে বিহাই সম্মোধন করে বল্লো। বিহাই সাহেব অনেক আশা করে এসেছি। দয়া করে আমাকে ফিরে দিবেন না। আপনার মেয়ে ইনশাআল্লাহ অনেক অনেক সুখে থাকবে। এরই মধ্যে মিলি এসে উপস্থিত সেখানে। কি হয়েছে আব্বাজান? চাচাজান তোমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক, তোমার হাত ধরে কি এতো অনুরোধ করছে। তুমি বা এতে অসম্মতি জানাচ্ছো কেন। ফজর মিলিকে কান্নায় আপ্লূত কন্ঠে বলছে এখন পুরো ঘটনা। তোমার বাবার সাথে আমার সাতাইশ বছরের সম্পর্ক। এই সম্পর্কটাকে ধরে রাখার জন্য তোমাকে আমার ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। আমার বিশ্বাস তুমি আমার ছেলের ঘর সংসার কে উজ্জ্বল করে রাখতে। মিলি এক বাক্যে রাজি হ’য়ে গেলো। বল্লো সেতো ভালো কথা। তার জন্য আবার কাকুতি মিনতি করতে হবে কেন? অনিক ভালো ছেলে। আমরা সবাই মিলে আমার শ্বশুর বাড়ির সংসার জীবন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবো। মিলি বল্লো আপনি আয়োজন করুন তারাতারি। আলতাবুর রহমান বেদনায় আপ্লূত কন্ঠে বলছে ওরে পাগলি মেয়ে আমার আমি সে কথা বলি নি মা। তোর গায়ের রং কালো। আর অনিক যদি তোকে পছন্দ না করে। না করলে নাই। সোজা কথায় উত্তর দিয়ে দিলো, মিলি। ফজর আলী দীর্ঘ দিন তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতে করতে ফজর আলী পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি মিলির ভালোবাসা ভালো লাগা এক হয় গেছে। অনিক আমাকে মেনে না নিলেও আমি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির মাঝে বেঁচে থাকবো। তুমি অমত করো না বাবা। না হলে তোমার স্যার মনে মনে অনেক কষ্ট পাবে। বেশ তুইয়ে যখন বলছিস তাহলে আর কি। পরে কিন্তু আমাদের দোষ দিতে পারবি না। আমি তোর ভালোর জন্য বলছি রে মা। না বাবা তুমি দেখে নিও আমি ওখানে খুব ভালো থাকবো। দুই দিন পরে ওদের মহা ধুমধাম আয়োজন করে বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের বাসর ঘরে গিয়ে অনিক যখন মিলির মুখ দেখতে গেলো। অমনি অনিক চমকে উঠে। একি তুমি এতো কালো কেন? তোমাকে নিয়ে আমি আমার বন্ধু বান্ধবের সামনে দাঁড়াতে পার বো না। এবার মিলি বল্লো দাড়াতে না পারতো আমাকে সাথে নিবে না। অসুবিধা কোথায়? আর আমিতো আর নিজের ইচ্ছায় কালো হয়ে জন্মায়নি। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতে জন্মেছি। কালো হলেও তো আমি একজন মানুষ। গায়ের রং টা কালো মিলির হাতের কাজগুলো খুব সুন্দর। সুন্দর করে কথা বলতে পারে। কারো সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে তাঁকে আপন মানুষ মনে হয়। অনিক বালিশ নিয়ে খাট থেকে নেমে মাটিতে শুতে যাবে, তখন নববধূ অনিককে বল্লো তুমি এ বাড়ির ছেলে। তুমি খাটে থাকো। আমি বরং মাটিতে থাকি। অনিক খাটে শুলো, আর মিলি মাটিতে শুলো। মিলির মনে একটুও দুঃখ নিলো না। মনে মনে আবার মিলি বলছে আমিই তোমার একমাত্র প্রিয়তমা। আমাকে ছাড়া তোমার এক দম চলবে না। ভোর বেলাতে মিলি ঘুম ভেঙে যায়। সে তড়িঘড়ি করে বিছানা পত্র গুছিয়ে নিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে চারদিকে শুধু চকচক করছে অন্য দিনের চেয়ে আজকে বেশি পরিপাটি মনে হচ্ছে। মিলি ও তার স্বামীর অপছন্দের কথা কেউ জানতে পাড়ে না। মিলির মনে তার কষ্টের ছাপ বুঝতে পারে না কেউ। মিলি পুরো সংসারী বনে গেছে। সে ঐ বাড়িতে কর্তা সেজে গেছে। শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে পরামর্শ দেয়। এটা করতে হবে ওটা করতে হবে। সবগুলোতে আবার সুফল বয়ে আসে। কোন কিছু ক্ষতি হয় না। মিলি খুব পরিশ্রমী। সারাদিন শ্বশুর বাড়িতে কাজ আর কাজ। ক্ষেত খামারে কৃষক কৃষাণী কাজ করছে, সেখানে গিয়ে দেখাশোনা করে। তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনে। কুশল বিনিময় করে। কেউ আর্থিক সহযোগিতা চাইলে তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করে। তার গায়ের রং কালো, কিন্তু মানুষের সঙ্গে যখন কথা বলে তখন তাঁর মুখে একটা হাসির ঝলক ফুটে। কোন মানুষ মিলির নিন্দা করে না। আট দশটা গ্রামের মানুষ তার ব্যবহারে সন্তুষ্ট। রান্না বান্না করতেও মিলি পাকা রাধুনি। সে যেটাই রান্না করুক না কেন। স্বাদ হবেই হবে। যে খাবে সে হাত চেটে পুটে খাবে। খুব ভালো রান্না হয়েছে একথা তাঁকে বলতে হবে। গল্প গুজব করার ক্ষেত্রেও বেশ পরিপাটি। সে সুন্দর সুন্দর গল্প শোনায় অবসর সময়ে। পাড়া প্রতিবেশী স্বজনের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। শ্বশুর শ্বাশুড়ি মিলিকে তাদের নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে। মিলি আবার গোপনে গভীর রাতে একা একা বসে বসে মজার মজার কবিতা লিখে আবার সেই লেখা দৈনিক ইত্তেফাক বাংলাদেশ বুলেটিন যায়যায়দিন ইত্যাদি দৈনিক গুলোতে ছাপানো হয়। মিলির ঠিকানায় এক কপি করে পোস্টে পাঠিয়ে দেয়। একদিন একটা ছোট্ট গল্প কালো মেয়ে বিশাল একটা কাহিনি দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায়। পত্রিকাটা অনিকের আসলে অনিক পাতা খুলতেই মিলির ছবি সহ কালো মেয়ে গল্প ছাপানো হয়। কালো মেয়ের রুপ লাবন্য সংসারে মনোযোগ স্বামীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা অতিথিপরায়ণতা শ্বশুর শ্বাশুড়ি সেবাগুলো বেশ সুন্দর করে ছাপানো হয়। এক কথায় গল্প অনিক কে আকৃষ্ট করে ফেলে। মিলির প্রতি অনিকের ভালবাসার জন্ম হয়। গল্পটি পড়ে পত্রিকা খানা তাঁর ব্যাগে রাখলো। ঐ দিন হতে অনিক একটি করে পত্রিকা স্পেশাল ভাবে ক্রয় করে। অফিস হতে বাড়ি ফিরে অনিক মিলির প্রকাশিত গল্প পত্রিকা মিলির ঘরে রেখে আসে। মিলি বিয়ের পরের দিন হতে আলাদা বিছানায় শোয় তাহা কেউ জানে না। মিলি বুঝতে দেয় না কাউকে। সে বুঝতে দেয় না তার নিজের বাবা মা কেও। বাবা মা তাঁকে নিজের বাড়িতে বেড়াতে যেতে বল্লে মিলি এক বাক্যে বলে দেয় আমার যাওয়ার সময় নাই। তোমরা এসে বেড়ে যাও সময় করে আমি একদিন না হয় যাবো। মিলির বাবা-মা মিলির কথা শুনে অবাক হয়। এতো দেখছি আচ্ছা সংসারী বনে গেছে। অনিক একদিন কাউকে কিছু না ব’লে এক সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে ঘরে তুলেছে। সবাই আচমকা খেয়ে উঠলো। একি কান্ড। অনিককে দেখলেতো এরকম মনে হয় না। সে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে এরকম সাহস অনিকের হলো কি। কেউ কোন কথা বলছে না। সবাই হতভম্ব। যাই হোক স্বামী বিয়ে করে এনেছে। এখন আর কি করার আছে। আমার চেহারাও ভালো নয়। কাজেই তারও রুচির ব্যাপার আছে। সে যদি ভাত কাপড় দিতে পারে তাহলে আমার অসুবিধা কোথায়?
মিলি যে ভালো মেয়ে তার স্বামী প্রমাণ পেলো তারপরের দিন। অনিক অফিসে যাবে খুব তারাতারি। তার নতুন বউ নাক ডাকি ঘুমোচ্ছে আর ঘুমোচ্ছে। মিলি অনিকের তারাহুরো দেখে সে তার প্যান্ট শার্ট সুন্দর করে আয়রন করলো। তার জুতোগুলো মিলির শাড়ির আঁচল দিয়ে সুন্দর করে মোলায়েম ভাবে মুছে চকচকে নিখুঁত করে দিলো। আর নতুন বউ নাক ডাকে ঘুমোয়। মিলি বাড়ির যাবতীয় কাজকর্ম গুছিয়ে রাখে। মিলি কালো মেয়ে হলেও তার কর্মগুাগুনগুলো অতি সাধারণ এবং চমৎকার। মা নতুন বউকে তরকারি রান্না করতে বল্লে নতুন বউ মা’কে যা তা ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার বাবা বিশাল বড়লোক। আমরা কোনোদিন নিজ হাতে রান্না করি নাই। আমরা সারাজীবন চাকর বাকর দিয়ে কাজকর্ম চালিয়েছি। অনিকের বাবা-মা নতুন বউয়ের একথা শুনে মনে মনে ভীষণ কষ্ট পায়। অনিকের সাথে কথা বন্ধ করে দেয়। অনিকের বাবা-মা র কথা হলো যে, আমরা দেখে শুনে ছেলের বিয়ে দিলাম। সে বউ ছেলে পছন্দ না। ছেলে নিজের পছন্দ করে বিয়ে করে আনলো। সে বউ এতো জঘন্য হতে পারে ভাবতে পাচ্ছি না। মিলির লেখা জাতীয় দৈনিক গুলো ছাপানো হয় প্রতি সপ্তাহে। একদিন হঠাৎ দৈনিক যায়যায় দিন পড়ছে। মিলির শ্বশুর। পত্রিকার ভাজ খুলতেই চোখের উপর ভেসে আসে মিলি রচিত কবিতা মানুষের প্রতি ভালোবাসা। কবিতা পড়ে শ্বশুর ফজর আলী কেঁদে ফেলে। মিলি এতবড় মনের মানুষ। এতো দরদ দিয়ে কবিতা লিখে সত্যি অবাক করার কথা। একদিন ভোর বেলাতে অনিকে ঘুম ভেঙে যায়। তখন ফজরের ওয়াক্ত হয়নি। অনিক দেখে মিলি তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে মুনাজাত করছে। মিলি দোয়া করছে স্বামীর জন্য শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য, বাবা-মায়ের জন্য, ভাই বোন চাচ চাচী, দাদা দাদী, নানা নানির, ফুফু ফুফা সর্বশেষ পৃথিবীর সকল জীব বস্তুর জন্য মিলি দোয়া করে। অনিকের মনে মনে কষ্ট লাগে। বুঝতে পারে এবারে অনিক। অনিক মিলির উপর কতো অত্যাচা অবিচার করছে তবু্ও মিলি তার স্বামীকে নিয়ে গল্প কবিতা লিখে পত্রিকায় ফলাও করে তাদের স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার কথা। এদিকে শ্বশুর শ্বাশুড়িও মিলিকে প্রাণ খুলেদোয়া করে। তুমি অনেক বড় মনের মানুষ। আমার ছেলে তোমাকে অনেক কষ্ট দেয়, তারপরও তুমি তাঁকে এতো ভালোবাসো। তুমি মানুষ নাকি ফেরেস্তা জানি না। শুধু জানি এই টুকু উপরের রং কালো তবে ভেতর খানি উদার। একদিন হঠাৎ দুপুর বেলা প্রচন্ড শিলাবৃষ্টি ঝড় আসে। আকাশ চমকাচ্ছে।বাহিরে কিছু দেখা যায় না। মাঠে দুটো ষাঁড় বাঁধা আছে। ষাঁড় দুটো জোরে জোরে ডাকছে। কেউ বাহির হতে পারছে না। মিলির ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ষাঁড় দুটোর ডাক সে সহ্য করতে পারছে না। প্রচন্ড শিলাবৃষ্টি মনটা মানছে না। সে সাহস করে মাঠে দৌড় দিয়ে ষাড় দুটো রশি খুলে ষাড় দুটো দৌড়ে এসে গোহালে ঢুকে শিলাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেলেো ষাঁড় দুটো ।মিলির শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও অনিক মিলির সাহস দেখে বাহবা দেয়। অন্য দিকে অনিকের নতুন বিয়ে করা সুন্দরী বউ নাক ডাকি শুধু ঘুমায়। একদিন অনিকের কিছু টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়। অনিক তার বাবার কাছে চাইলো বাবার কাছে টাকা নাই ব’লে জানিয়ে দিলো। কোথাও টাকা পেলো না অনিক। আগামীকাল টাকা লাগবে। নতুন বউকে বল্লো অনিক বাবা মায়ের কাছে কিছু টাকা দিতে। নতুন বউ সাফ জানিয়ে দেয় তার বাবা মায়ের কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই। মিলি এ কথা জানতে পেড়ে খুব কষ্ট পেলো। সে পত্রিকা অফিস হতে সম্মননা স্বরূপ কিছু টাকা পেয়েছে। আবাার মাঝে মধ্যে মিলির বাবা আলতাবুর রহমান মিলিকে দেখতে এসে মিলির হাত খরচের জন্য কিছু কিছু টাকা দিয়ে যায়। মিলি সেগুলো খরচ না করে জমিয়েছে। আজ তার স্বামীর দুর্দিনেে স্বামীকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিল। এবার অনিক তাঁর ভুল বুঝতে পারে। মানুষের উপরের রং দেখে মানুষ চেনা যায় না। মানুষ চেনা যায় অন্তরের ভালোবাসা দিয়ে। অনিক আস্তে আস্তে মিলিকে ভালোবাসতে শুরু করে। মিলিও অনিকের ভালোবাসার সারা দেয়। কালো সাদার অবসান ঘটিয়ে অনিকের অন্তরে ঢুকে পড়ে কালো মেয়ে মিলি। অনিক আর মিলির ভালোবাসা চলতে থাকে গভীর থেকে গভীরে। সাদা রং আর দেখে মানুষ চেনা যায় না । মানুষ চিনতে হলে তার ভেতরের অন্তর চিনতে হবে।
লেখক:
মোঃ জাবেদুল ইসলাম, রমনীগঞ্জ, বড়খাতা হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট।