চ্যানেল ২৬ বিডি.কম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, যদি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হয়, তাহলে তো আমিও ঘোষক। কারণ, ওইদিন মধ্যরাতে বরিশালে খবর পৌঁছানোর পর আমি একমাত্র মানুষ যে, বরিশালে বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা মাইকিং করেছিলাম।
শনিবার (২৩ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, যে জিয়াউর রহমান ৫২, ৫৪, ৫৬, ৫৮, ৬৬ ও ৬৯ দেখে নাই, যে জিয়াউর রহমান ৭০ এর নির্বাচন দেখে নাই, হঠাৎ করে সে চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেডিও থেকে ঘোষণা করেই ঘোষক হয়ে গেলেন।
নানক বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে গণহত্যা পরিচালনা করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিগ্রামের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন সে স্বাধীনতার ঘোষণাই ছিল সর্বশেষ। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের মিত্র রাষ্ট্র চীন থেকে শুরু করে কেউ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন বলতে পারে নাই। কারণ, তিনি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বাংলার স্বাধীনতার কর্তৃত্ব অর্জন করেছিলেন। সে কারণেই বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছেন এবং সমর্থনযোগ্য হয়েছেন। অনেকেই বলেন, হুইসেল বাতি দিয়েছেন আর স্বাধীনতা এসে গেছে।
১৯৭৫ সাল ও এর পরের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা দীর্ঘ একটি কালো অধ্যায় পার করেছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এই বাংলাদেশ খুনিদের অবাধ বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যাদেরকে পরাজিত করেছিলাম, সেই ঘাতকদের অবাধ বিচরণের চারণভূমিতে পরিণত করেছিল জেনারেল জিয়াউর রহমানের সরকার। কাজেই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তখন আবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
জামায়াত-শিবিরের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির কিন্তু বসে নেই। ওরা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। আমি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন করেছি, এরশাদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন করেছি, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় দাঁড়িয়ে এবং সারা বাংলাদেশে আমি বলেছি যে, একটি জাতি সাপ আশপাশে চলছে। এই জাতি সাপ সবসময় সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে। যখনই সুযোগ পাবে, তখনই এই জাতি সাপ জামায়াত আমাদের ওপর ছোবল মারবে। কাজেই, এই সাপের লেজে-পিঠে বাড়ি দিলে চলবে না। মাথায় বাড়ি দিতে হবে, এই দেশ থেকে নিঃশেষ করে দিতে হবে।
ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একটি কঠিন লড়াইয়ে আছি। আমাদের এখন খুব সহজ সময় যাচ্ছে না। আজকে বিএনপি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধুর শৈশবকালের ঘটনা বর্ণনায় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশবকাল থেকেই একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন। এ মানুষটি জন্মের পর থেকেই দেখেছেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এলাকায় জমিদারদের দৌরাত্ম্য, ভূস্বামীদের দৌরাত্ম্য। ভূমিহীনদের নিগৃহীত হওয়ার দৃশ্য তিনি দেখেছেন। আমার প্রতিবাদ করতে হবে, মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, এমন মানসিকতা নিয়েই তিনি ছোটবেলা থেকে গড়ে উঠেছেন। মুজিব শব্দের অর্থ হলো উত্তর দাতা। তিনি তার জীবনে সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে উত্তর দিয়েছেন। তাছাড়া, এই মানুষটি তার শৈশবকাল থেকেই ছিলেন একজন মানবিক মানুষ। স্কুলে যে বন্ধুটির গায়ে ছেঁড়া শার্ট পরিহিত ছিল, সেই বন্ধুকে তার নিজের শার্টটি দিয়ে আসা ছিল তার বাল্যকালের এক সুন্দর চরিত্র।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন ও এর পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, পাকিস্তান নামে জাতি রাষ্ট্রটি একটি সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প নিয়ে জন্ম হয়েছিল। সে রাষ্ট্রটি ছিল ধর্মান্ধতায় নিপতিত একটি দেশ। ধর্মকে হাতিয়ার করে পাকিস্তানিরা আমাদের যে শাসন-শোষণ করেছে, যে সমাজ ব্যবস্থায় আমার মা বরিশাল শহরে বোরখার দোপাট্টা পড়ে রিকশায় চড়ার পরও একটি শাড়ি বা চাদর দিয়ে রিকশাকে ঢেকে তারপর তাকে চলতে হতো। এই ছিল ধর্মান্ধতার পরিস্থিতি।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
এছাড়া, বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।